চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যার তদন্ত গুটিয়ে এনেছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা কিছু না বললেও বাহিনীটির বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিতুর স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুলের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি তিনি। এ কারণে আসামির তালিকায় বাবুলের নাম থাকছে না।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তে সময় নিয়েছে প্রায় দুই বছর। কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোন মুহূর্তে আদালতে দাখিল হতে পারে এটি।
মামলাটি তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-ডিবি-উত্তর) মো. কামরুজ্জামান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘অভিযোগপত্র চূড়ান্ত। দ্রুত তা আদালতে দাখিল করা হবে।’
তবে অভিযোগপত্রে কী আছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনও আমাদের হাতে মিতু হত্যার চূড়ান্ত কোন প্রতিবেদন হাতে পৌঁছেনি। যদি আসে তবে জানাব।’
মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কবে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে, সেটি আমার জানার কথা নয়। আর এখানে আমার নাম আছে কি নেই, সেটাও আমার জানা নেই। তবে এই মামলায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, সেটি আগেও বলেছি।’
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের প্রশ্ন, বাবুল আক্তার যদি খুনের সাথে জড়িত না থাকে তাহলে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি কেন নিলেন।
বাবুলের শ্বশুরের অভিযোগ, বাবুল আক্তারই তার নিজস্ব লোক দিয়ে মিতুকে হত্যা করিয়েছে।
‘বাবুল আক্তার এই রকম অপরাধ করবে, অথবা এর পরিকল্পনা করেছে তারই প্রমাণ হলো- মিতু একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু।
এর কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন বাবুল। সে সময় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলছিল। আর শুরুতে ঘটনাটি জঙ্গিদের কাজ বলেই ধারণা করা হয়েছিল।
স্ত্রী হত্যার পর বাবুল চট্টগ্রামে ফিরে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত এগিয়ে যাওয়ার পর বের হয়ে আসে, এর সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই। বাবুলের নামও আসে এই ঘটনায়। আর বাবুল পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন।
ঘটনাস্থলের সিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে মূসা, কালু, ওয়াসিম, আনোয়ার ও নবীকে। এরা সবাই হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ছাক্কু খুনিদের মোটরসাইকেল দেন বলেও পাওয়া গেছে তদন্তে। আর হত্যায় ব্যবহৃত রিভলভার সরবরাহকারী ছিলেন এহতেশামূল হক।
মামলার সন্দেহভাজন আসামির মধ্যে ওয়াসিম, আনওয়ার, শাহজাহান এবং এহতেশামূল হক বর্তমানে কারাগারে। জামিনে রয়েছেন আসামি ছায়েদুল আলম ছাক্কু, আবু নসর গুন্নু এবং রবিন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান আসামি নবী ও রাশেদ।
এছাড়াও মূল আসামি মূসা সিকদার ও কালু পলাতক। এদের মধ্যে মূসাকে নিয়েও আছে রহস্য। তার স্ত্রীর দাবি, তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির দাবি, তারা মূসাকে খুঁজে পাচ্ছে না। – ঢাকাটাইমস